ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

এ কে এম মনিরুজ্জামান

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
০২ জুন ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
২০ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম
এ কে এম মনিরুজ্জামান
এ কে এম মনিরুজ্জামান

প্রকৌশলী এ কে এম মনিরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে অবাঙালিরা। বাবার এই করুণ পরিণতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তাঁর ছেলে রফিকুল আলম। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী, ঢাকায় বসবাস করেন।

শহীদ প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান পাকিস্তান আমলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পেইন্ট শপের ফোরম্যান ছিলেন। পরিবারসহ বসবাস করতেন শহরের সাহেবপাড়া এলাকায় রেলের বাসভবনে। ১৯২৪ সালে তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার কোটচাঁদপুরে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম শামসুদ্দীন আহমেদ। মা জাহানারা বেগম।

রফিকুল আলম বলেন, তাঁর বাবা মনিরুজ্জামান ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ। সরাসরি রাজনীতি না করলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সহকর্মীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। উর্দুভাষী অবাঙালি প্রধান সৈয়দপুরে স্বাধিকার, স্বাধীনতা নিয়ে বাঙালি সহকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আলোচনা করতেন। অবাঙালিদের কাছে এটাই ছিল তাঁর অপরাধ।

তখন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ২২টি উপকারখানা ছিল। ১৯টির প্রধান দায়িত্বে ছিল অবাঙালিরা। তিনটি উপকারখানার প্রধান ছিলেন তিনজন বাঙালি প্রকৌশলী। এ কে এম মনিরুজ্জামান তাঁদের একজন। বাঙালি কর্মকর্তা হওয়ার জন্যও অবাঙালিদের ঈর্ষার কারণ হয়েছিলেন তিনি। আবু মোহাম্মদ নামের এক অবাঙালি কর্মচারীকে তিনি আপন ভাইয়ের মতো ভালো বাসতেন। কিন্তু সেই আবু মোহাম্মদের ইন্ধনেই অবাঙালিরা তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।

বাংলা একাডেমির রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি-১৯৭১ গ্রন্থের পুনর্বিন্যাসকৃত তৃতীয় খণ্ডে শহীদ প্রকৌশলী এ কে এম মনিরুজ্জামানকে নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক লেখা রয়েছে তাঁর ছেলে রফিকুল আলমের। তিনি লিখেছেন, একাত্তরের মার্চের প্রথম থেকে অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুর উত্তাল হয়ে ওঠে। শহরের সংখ্যালঘু বাঙালিদের তারা অনেকটা অবরুদ্ধ করে ফেলে। এ অবস্থায় মা সালেহা বেগম ও তাঁদের সাত ভাইবোনকে নানাবাড়ি যশোরে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দেন তাঁর বাবা। তবে তাঁরা যশোর পর্যন্ত যেতে পারেননি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় চুয়াডাঙ্গায় নামতে বাধ্য হন। সেখানে খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন। চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা গণহত্যা শুরু করলে তাঁরা ভারতে গিয়ে আশ্রয়শিবিরে ওঠেন। বাবার কোনো খবর তাঁরা পাননি। অনেক পরে তাঁরা হত্যার কথা জানতে পারেন।

শহীদ মনিরুজ্জামান সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ২১ মার্চ পরিবারকে ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল সেই অবাঙালি সহকর্মী আবু মোহাম্মদ। স্টেশন থেকে ফিরে বাসার দোতলায় একা বসে বই পড়ছিলেন মনিরুজ্জামান। এমন সময় আবু মোহাম্মদ তাঁর রিভলবার থেকে সংকেতসূচক একটি গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রামদা, কিরিচ, বল্লম, তলোয়ার হাতে শতাধিক অবাঙালি বাসভবনটি ঘিরে ফেলে। তারা মনিরুজ্জামানের বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে ফেলে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী সালেহা বেগমের কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। সালেহা বেগম ২০১৭ সালে মারা গেছেন। সৈয়দপুর রেলওয়ের শহীদ স্মৃতি পার্কের ফলকে ও ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ সূর্য কেতনে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের নাম উৎকীর্ণ

রয়েছে। রেলওয়ের বিশেষ প্রকাশনা রেল বাতায়নে শহীদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সরকারি তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৭ আগস্ট ১৯৭১: লন্ডনে প্রবাসী সরকারের কূটনীতিক মিশন উদ্বোধন

২৫ আগস্ট ১৯৭১: কানলা গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

২৬ আগস্ট ১৯৭১: পূর্বপাড়া ওয়ারলেস কেন্দ্র গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

২৬ আগস্ট ১৯৭১: পশ্চিমগ্রাম গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

২৬ আগস্ট ১৯৭১: দাসপাড়া গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

২৬ আগস্ট ১৯৭১: কুণ্ডুবাড়ি হত্যাকাণ্ড

২৬ আগস্ট ১৯৭১: তীব্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী কানসাট ছেড়ে পালায়

২৫ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

২৪ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৩ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানি বাহিনীর জগন্নাথদিঘি ঘাঁটিতে আক্রমণ মুক্তিবাহিনীর

১০

২১ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ ইরাকে নিযুক্ত বাঙালি রাষ্ট্রদূতের

১১

ইউনুসের বাধায় নতুন রূপে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু

১২

একজন অমর মুক্তিযোদ্ধার জীবনী / বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান

১৩

২০ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকা হানাদারমুক্ত করেন

১৪

১৯ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী অপারেশন মুক্তিবাহিনীর

১৫

১৮ আগস্ট ১৯৭১: কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ

১৬

১৭ আগস্ট ১৯৭১: মাকালকান্দি গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ

১৭

একজন স্কুলছাত্রের গ্রেপ্তার: শিশু অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন

১৮

১৪ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

১৯

১৩ আগস্ট ১৯৭১: বঙ্গবন্ধুর বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশে প্রতিরোধের তীব্রতা

২০