ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
সংস্কার নাকি অপচয়?

নতুন নোটের পেছনে ২০ হাজার কোটি টাকার গল্প

রাজু নোরুল
০৩ জুন ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
২৩ জুন ২০২৫, ০২:২৫ পিএম
নতুন নোটের পেছনে ২০ হাজার কোটি টাকার গল্প

বাংলাদেশের বাজারে মোট কী পরিমাণ টাকা আছে, সেটা বলা কঠিন! তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বিভিন্ন হিসাব বিবেচনায় নিলে বলা যায়, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ করা মোট মুদ্রার বাজার মূল্য ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা

এর মধ্যে ছাপানো নোট আকারে বাজারে আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। কয়েনের পরিমাণ কত, সেটা সরকার কখনোই জানায়নি। তবে এর পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হয়।

ঈদকে সামনে রেখে বাজারে নতুন নোট এসেছে। একে একে সব নোট ছাড়া হচ্ছে বাজারে। বাজারে থাকা সব নোট ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে। এটা এক বিশাল কর্মযজ্ঞ!

নোটের ডিজাইন কেমন হলো, সেসব নিয়ে লোকজন কথা বলছে। কিন্তু পেছনে পড়ে থাকছে এক অজানা গল্প! আজ বাজেট পেশের দিনে এটা নিয়ে বরং কথা বলা যাক!

বাংলাদেশের যেখানে টাকা ছাপা হয় তার নাম টাকশাল। ওখানে যে মেশিনে টাকা ছাপা হয়, সেগুলো প্রায় ৪০ বছর পুরোনো। কিন্তু এবার সরকার টাকা ছাপাচ্ছে নতুন মেশিনে। মেশিন কিনতে খরচ হয়েছে আড়াইশ কোটি টাকার বেশি!

এ ছাড়া ছাপানোর পেছনে অন্যান্য খরচ হিসেব করলে এ খরচ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যেহেতু প্রতিটি নোটেরই নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে, ফলে এর পেছনে বড় একটা খরচ নিশ্চয়ই হয়েছে।

এর বাইরে, প্রতিটি ১০০০ টাকার নোট নতুন করে ছাপাতে ৫ টাকা খরচ হয়৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা

২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০, ৫০ টাকার সব নোটে অন্তত দেড় টাকা করে খরচ হয়। আর ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে গড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা

তার মানে বাজারে যে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার নোট আছে, সেগুলো তুলে নিতে সরকারের খরচ কত হবে জানি না। কিন্তু আমি যদি গড়ে প্রতি ১০০ টাকা ছাপাতে ২ টাকা খরচ ধরি (যদিও গড় খরচ আরও বেশি হওয়ার কথা), তাহলে বাংলাদেশের বাজারে থাকা সমপরিমাণ টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ হবে — কমপক্ষে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা!

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে! প্রতিটি কয়েনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। মানে, একটি ৫ টাকার কয়েন বানাতে ৫ টাকা লেগে যায়! তার মানে বাজারে থাকা ৪ হাজার কোটি টাকার কয়েন তুলে নিয়ে নতুন করে বানাতে সরকারের খরচ পড়বে ওই টাকার সমান, মানে আরও ৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও সরকার কয়েন তুলে নিয়ে নতুন করে কয়েন বাজারে ছাড়বে কিনা, এই বিষয়ে আমার জানা নেই।

তার মানে এই দাঁড়াল যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজারে থাকা নোট তুলে নিয়ে নতুন নোট ছাড়তে প্রায় কমবেশি ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে!

এই টাকা দিয়ে কী করা যেত? এবার সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক!

এর সাথে অল্প কিছু যোগ করে আরেকটা পদ্মা সেতু করা যেতো! বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। অন্তত ২০ হাজার স্কুলে নতুন ভবন বানিয়ে দেওয়া যেত। প্রতিটি ভবনের পেছনে ১ কোটি টাকা বাজেট ধরলাম!

প্রায় ১০০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হতো। যেখানে গত বছর ঢাবির গবেষণা খাতে বাজেট ছিল ২০ কোটি টাকা। জাহাঙ্গীরনগরে এই বাজেট ছিল অস্বাভাবিক কম, মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ!

শুধু কী তাই?

সরকার যে বিভিন্ন খাতের দরিদ্র মানুষদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা দেয়, তাদের জন্য মাথাপিছু প্রতি মাসে বরাদ্দ এবার ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! অথচ ওই টাকাটা এখানে আসলে সেটা ১০০০ টাকায় উন্নীত করা যেত।

যদিও এই সরকারের আমলে অনেক মাস ধরেই প্রায় অধিকাংশ সামাজিক ভাতা বন্ধ! ফলে দরিদ্র মানুষ সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে!

বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত ৯ মাসে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র অবস্থায় নেমে গেছে। অতি দরিদ্র মানে — দিনে আয় ২০০ টাকার কম! এই মানুষগুলোকে একটু উপরের দিকে টেনে তোলা যেত ওই টাকাটা দিয়ে…

সরকার এসব না করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন নোট ছাপাচ্ছে। কেন ছাপাচ্ছে জানেন?

শুধু পুরনো সব নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আছে বলে! শুধু তাই না, বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে বলে গত ঈদে নতুন কোনো নোটই বাজারে ছাড়া হয়নি!

এই হলো সংস্কার!

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথরাইল-নলশোদা গণহত্যা (দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল)

৩০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর সফল গেরিলা অভিযান

গঙ্গাচড়ার সহিংসতা / রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও সমাজের নীরবতা

২৯ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ কার্যক্রম তীব্রতর

সংবিধানের সঙ

২৭ জুলাই ১৯৭১: বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী আক্রমণ

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)

২৪ জুলাই ১৯৭১: ভেনিজুয়েলা ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

১০

মানুষই মানুষের অন্তিম আশ্রয়

১১

২৩ জুলাই ১৯৭১: বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত

১২

২২ জুলাই ১৯৭১: টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ

১৩

ভাড়ায় চাপাতি ও মোটরসাইকেল: রাজধানীর অপরাধ জগতের ভয়াবহ নতুন রূপ

১৪

রাজনীতির উনমানুষরাই প্রলাপ ডাকে বেশি

১৫

২১ জুলাই ১৯৭১: ঠাকুরগাঁওয়ে গেরিলা অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের

১৬

মবতন্ত্রের জয়

১৭

ডিজিটাল দাসত্ব: মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

১৮

২০ জুলাই, ১৯৭১: বাংলাদেশে কুচক্রী আগ্রাসন

১৯

২০ জুলাই ১৯৭১: বিলমাড়িয়া হাটে গণহত্যা পাকিস্তানি সেনাদের

২০