ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
রহস্যজনক মৃত্যুর প্যাটার্ন

সংখ্যালঘু নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ‘আত্মহত্যা’ নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

সম্মোহোন ঋক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম
সংখ্যালঘু নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ‘আত্মহত্যা’ নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক সংখ্যালঘু সদস্য রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মৃত্যুকেই “আত্মহত্যা” বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর ধরন, প্রমাণ সংগ্রহের অভাব, এবং তদন্তের সীমাবদ্ধতা এসব ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনাগুলো

১. কনস্টেবল তৃষ্ণা বিশ্বাস (পটুয়াখালী পুলিশ লাইনস)

তারিখ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

মৃত্যুর বিবরণ: ব্যারাকে সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তবে পা মাটিতে ছুঁয়ে ছিল।

সরকারি বক্তব্য: মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা।

সন্দেহ: সিলিং-এর উচ্চতা আত্মহত্যার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কোনো স্বাধীন ফরেনসিক তদন্ত হয়নি।

২. কনস্টেবল রুম্পা দাশ (বান্দরবান)

তারিখ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মৃত্যুর বিবরণ: ভাড়া বাসায় ঝুলন্ত দেহ, গলায় ফাঁস লাগানো দড়ি জানালার রেলিংয়ে।

সরকারি বক্তব্য: ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে আত্মহত্যা।

সন্দেহ: মৃত্যুর আগে কোনো সুইসাইড নোট ছিল না।

৩. কর্পোরাল দুর্জয় শীল দিলীপ (বনানী ক্যান্টনমেন্ট)

তারিখ: ২১ এপ্রিল ২০২৫

মৃত্যুর বিবরণ: সেনা ব্যারাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ পাওয়া যায়। পা মাটিতে ছুঁয়ে ছিল।

সরকারি বক্তব্য: কর্মচাপের কারণে আত্মহত্যা।

সন্দেহ: পরিবারের সদস্যদের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি।

৪. এএসপি পলাশ সাহা (র‍্যাব-৭, চট্টগ্রাম)

তারিখ: ৭ মে ২০২৫

মৃত্যুর বিবরণ: অফিস রুমে গুলিবিদ্ধ দেহ, হাত কোলের উপর সাজানো অবস্থায়।

সরকারি বক্তব্য: একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যা আত্মহত্যার প্রমাণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

সন্দেহ: চিরকুটের সত্যতা যাচাই করা হয়নি। স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্যাটার্ন ও বিশ্লেষণ

১. সংখ্যালঘু টার্গেটিং

মৃতদের সবাই হিন্দু, আদিবাসী বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্য। প্রশাসনের অভ্যন্তরে উগ্রবাদী নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

২. অভিন্ন মোডাস অপারান্ডি

প্রতিটি মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে চালানো।

মৃত্যুর স্থান ও দেহের অবস্থান অস্বাভাবিক।

কোনো স্বাধীন তদন্ত হয় না, এবং মিডিয়া কভারেজ সীমাবদ্ধ।

৩. প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র?

ধর্মীয় ক্লিনজিং: সংখ্যালঘুদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

সর্বোচ্চ মদদ: রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তর থেকেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হতে পারে।

দাবিগুলো কী?

১. স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন: আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।

২. মিডিয়ার স্বাধীনতা: মৃত্যুর পেছনের রহস্য খুঁজে বের করতে খোলামেলা আলোচনা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. সংখ্যালঘু সুরক্ষা: সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ কোটা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।

“আত্মহত্যা”র নামে এই মৃত্যুগুলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্র যদি নীরব থাকে, তবে ভবিষ্যতে আরও তৃষ্ণা, রুম্পা, পলাশের রক্তে রঞ্জিত হবে আমাদের ভূমি। যে রাষ্ট্র ন্যায়বিচার দেয় না, সেও একদিন বিচারের মুখোমুখি হয়।

সূত্র

মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট, ভুক্তভোগী পরিবারের সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথরাইল-নলশোদা গণহত্যা (দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল)

৩০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর সফল গেরিলা অভিযান

গঙ্গাচড়ার সহিংসতা / রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও সমাজের নীরবতা

২৯ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ কার্যক্রম তীব্রতর

সংবিধানের সঙ

২৭ জুলাই ১৯৭১: বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী আক্রমণ

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)

২৪ জুলাই ১৯৭১: ভেনিজুয়েলা ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

১০

মানুষই মানুষের অন্তিম আশ্রয়

১১

২৩ জুলাই ১৯৭১: বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত

১২

২২ জুলাই ১৯৭১: টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ

১৩

ভাড়ায় চাপাতি ও মোটরসাইকেল: রাজধানীর অপরাধ জগতের ভয়াবহ নতুন রূপ

১৪

রাজনীতির উনমানুষরাই প্রলাপ ডাকে বেশি

১৫

২১ জুলাই ১৯৭১: ঠাকুরগাঁওয়ে গেরিলা অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের

১৬

মবতন্ত্রের জয়

১৭

ডিজিটাল দাসত্ব: মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

১৮

২০ জুলাই, ১৯৭১: বাংলাদেশে কুচক্রী আগ্রাসন

১৯

২০ জুলাই ১৯৭১: বিলমাড়িয়া হাটে গণহত্যা পাকিস্তানি সেনাদের

২০