বাগেরহাটের বেশরগাতি গ্রামের শেখ হাবিবুর রহমান হবি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী দল গঠন করেন, যা "হবির পার্টি" নামে পরিচিত ছিল। এই দলটি চিতলমারী ও আশেপাশের গ্রামগুলোতে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের অনুপ্রবেশ রোধ করছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন সমগ্র বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আধিপত্য বিস্তৃত হচ্ছিল, তখনও হবির পার্টি বাগেরহাটের উত্তরাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল।
কান্দাপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক শেখ অলিউর রহমান শান্তি কমিটির সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা সম্পর্কে একটি ইংরেজি প্রতিবেদন লিখেন। এই প্রতিবেদন রাজাকার কমান্ডার রজ্জব আলী ফকিরের হাতে পৌঁছালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং কান্দাপাড়া-বেশরগাতি অঞ্চলে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
সেদিন শুক্রবার ছিল, এবং স্থানীয় লোকজন জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাজাকার বাহিনী দুই দলে বিভক্ত হয়ে কান্দাপাড়ায় প্রবেশ করে:
প্রথম দল: বাগেরহাট থেকে মুন্সিগঞ্জ খেয়া পার হয়ে আসে।
দ্বিতীয় দল: ফকিরহাটের মূলঘর থেকে কুচিবগা খালের পথে আসে।
রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে ২৫ জনকে ধরে আনে।
দেলোয়ার হোসেন মাস্টার ও ইব্রাহিম হোসেন মাস্টারকে বাড়িতে না পেয়ে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
হামজা আলী পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাজাকার কমান্ডার সিরাজ মাস্টার ২৫ জন বন্দির মধ্যে থেকে ১৮ জন যুবক, ৩ জন বৃদ্ধ ও ২ জন শিশুকে বেছে নেয়।
তাদের জবাই করে মাথা কেটে লাশের বুকের ওপর রেখে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়।
মঞ্জুর মোল্লা ছুরির আঘাত সহ্য করেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
নাম | গ্রাম |
---|---|
হামজা আলী | কান্দাপাড়া |
দেলোয়ার হোসেন মাস্টার | বেশরগাতি |
ইব্রাহিম হোসেন মাস্টার | বেশরগাতি |
শেখ আব্দুল আলী | বেশরগাতি |
শেখ মকবুল আলী | বেশরগাতি |
অজিত বসু | কদমতলা |
নারায়ণচন্দ্র দাস | উৎকুল |
অনেকের নামই ইতিহাসের পাতায় অজানা থেকে গেছে।
এই গণহত্যার পর হবির পার্টি আরও সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সিরাজ মাস্টার পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন।
কান্দাপাড়ার গণহত্যা শুধু একটি স্থানের ট্র্যাজেডি নয়— এটি ১৯৭১ সালে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নির্মমতার একটি প্রতীক। আজও এই দিনটি বাগেরহাটবাসীর মনে গভীর ক্ষত রেখে গেছে।
সূত্র
মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত
স্থানীয় সাক্ষাৎকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা
মন্তব্য করুন