ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

বসুনিয়াপাড়া-বাড়াইপাড়া গণহত্যা: কিশোরগঞ্জের এক কলঙ্কিত অধ্যায়

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
২৪ জুন ২০২৫, ০১:১১ পিএম
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মিলে ১৯৭১ সালে এই দেশে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে গণহত্যা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বড় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ | ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মিলে ১৯৭১ সালে এই দেশে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে গণহত্যা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বড় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ | ছবি: সংগৃহীত

(২৪ জুন, ১৯৭১)

ঘটনাস্থল ও পটভূমি

কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বসুনিয়াপাড়া ও বাড়াইপাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৪ জুন এখানে সংঘটিত হয় এক নির্মম গণহত্যা।

হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা

পাকিস্তানি সেনা ক্যাপ্টেন জাবেদের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় রাজাকার আবেদ হাজী, তসলিম দফাদার ও শমসের সর্দার-এর সহযোগিতায় এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন রাজাকাররা হিন্দুপাড়া লুণ্ঠনের চেষ্টা করে। স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করলে রাজাকাররা পিছু হটে। এর প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পিতভাবে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ২৪ জুন বসুনিয়াপাড়া, নলকুড়িপাড়া ও বাড়াইপাড়ায় গণহত্যা চালায়।

শহীদদের তালিকা

  • বসুনিয়াপাড়া: সেলিম উদ্দিন, মাত, শুকারু, হাছিনা (শুকারুর কন্যা)

  • বাড়াইপাড়া: আতাহার, আতিয়ার রহমান, আছিম উদ্দিন, মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রী

  • অন্যান্য গ্রাম থেকে: সালেম উদ্দিন (বড়ভিটা), রমিজ উদ্দিন (বড়ভিটা), ইরফান আলী (বেতগাড়ি), ঢোডা (চওড়াবাড়ি)

লাশগুলো প্রথমে বসুনিয়াপাড়ার আফসার আলীর বাড়ির একটি গর্তে পুঁতে রাখা হয়। পরবর্তীতে স্বজনরা সেগুলো উত্তোলন করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

নারী নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা

  • শমসের সর্দার পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে তার চাচা টোরা সর্দার ও চাচি রোকেয়া বেগম-কে রাজাকার আবেদ হাজীর মাধ্যমে পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয়।

  • মালুতি রাণী নামে এক নারী গণধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

  • বাড়াইপাড়ার এক গৃহবধূ ও রোকেয়া বেগমও পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন।

স্মরণ ও সতর্কতা

এ গণহত্যা শুধু একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, এটি ১৯৭১-এর গণহত্যার একটি প্রতীকী দলিল। আজও এই বর্বরতার সাক্ষী গ্রামবাসী। তাদের স্মৃতিচারণ ও স্থানীয় দলিলপত্র এই ইতিহাসকে সংরক্ষণ করছে।

তথ্যসূত্র

  • স্থানীয় সাক্ষাৎকার ও গণহত্যা জরিপ রিপোর্ট

  • আহম্মেদ শরীফ (স্থানীয় ইতিহাস গবেষক)

  • মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথরাইল-নলশোদা গণহত্যা (দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল)

৩০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর সফল গেরিলা অভিযান

গঙ্গাচড়ার সহিংসতা / রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও সমাজের নীরবতা

২৯ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ কার্যক্রম তীব্রতর

সংবিধানের সঙ

২৭ জুলাই ১৯৭১: বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী আক্রমণ

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)

২৪ জুলাই ১৯৭১: ভেনিজুয়েলা ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

১০

মানুষই মানুষের অন্তিম আশ্রয়

১১

২৩ জুলাই ১৯৭১: বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত

১২

২২ জুলাই ১৯৭১: টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ

১৩

ভাড়ায় চাপাতি ও মোটরসাইকেল: রাজধানীর অপরাধ জগতের ভয়াবহ নতুন রূপ

১৪

রাজনীতির উনমানুষরাই প্রলাপ ডাকে বেশি

১৫

২১ জুলাই ১৯৭১: ঠাকুরগাঁওয়ে গেরিলা অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের

১৬

মবতন্ত্রের জয়

১৭

ডিজিটাল দাসত্ব: মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

১৮

২০ জুলাই, ১৯৭১: বাংলাদেশে কুচক্রী আগ্রাসন

১৯

২০ জুলাই ১৯৭১: বিলমাড়িয়া হাটে গণহত্যা পাকিস্তানি সেনাদের

২০