ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

১২ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
১২ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে

১২ আগস্ট ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল দিন। এই দিনে মুজিবনগর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের একটি বার্তা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবৃতি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের তৎপরতা এই দিনকে একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য দান করে। এই প্রতিবেদনে ১২ আগস্টের ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো, যেখানে সকল তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

জনযুদ্ধে রূপান্তর: মুজিবনগর থেকে বার্তা

মুজিবনগর থেকে প্রেরিত এক বার্তায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ঘোষণা করেন, “মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।” এই বার্তা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক গণভিত্তিক রূপ নেওয়ার প্রমাণ বহন করে। এটি ছিল একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে মুক্তিযুদ্ধ শুধু সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, বরং পুরো জাতির স্বাধীনতার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পরিণত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান

এই দিনে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বের বেশ কয়েকটি শক্তিধর দেশের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠিতে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করার আইনগত, সাংবিধানিক বা অন্য কোনো অধিকার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নেই। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির জন্যই বঙ্গবন্ধুকে প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত।” এই চিঠি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব এবং তার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

ঢাকায় শান্তি কমিটির প্রচারণা

ঢাকায় এই দিনে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আলী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজাদী দিবস পালনের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, “অবশ্যই আমাদেরকে দুষ্কৃতকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশের আদর্শ ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।” এই বিবৃতি পাকিস্তানি প্রচারণার অংশ ছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করেছিল। তবে, এটি জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

ভারতের সমর্থন ও প্রতিক্রিয়া

ভারতের রাজনৈতিক মহলে এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক সরকার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিলে শুধু তা পূর্ববঙ্গেই হবে না, এর প্রভাব গোটা পৃথিবীতেই পড়বে। তার নিরাপত্তায় এগিয়ে আসার জন্য আমরা বেশ কয়েকটি দেশকে অনুরোধ জানিয়েছি।” ইন্দিরা গান্ধীর এই বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারতের অটল সমর্থনের প্রমাণ বহন করে।

একই দিনে দিল্লিতে ভারতীয় জনসংঘের এক বিশাল সম্মেলনে সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ী বলেন, “ভারত-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতিতে আমরা বুঝতে পারছি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। অথচ পাকিস্তান সরকার নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, ভারত সরকারের কোনো বিকার নেই। যদি বিকার থাকতো তবে ভারত সরকার মার্কিন সরকারের চাপে পড়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে ভয় পেত না।” বাজপেয়ীর এই বক্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিতর্ক এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতির প্রশ্নে ভিন্নমত প্রকাশ করে।

এছাড়া, ভারতের রাজ্যসভার ২০ জন মুসলিম সদস্য এক বিবৃতিতে বলেন, “বর্তমান পাকিস্তানের অবস্থান ও আদর্শ সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক মূল্যবোধ ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিরীহ মানুষের উপর নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ কখনোই ইসলাম বৈধতা দেয়নি। বিশ্বের সব মুসলিম দেশের উচিত এই ভয়াবহ পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। এটি সব মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।” এই বিবৃতি পাকিস্তানের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করে।

ত্রিপুরার আগরতলায় দুটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে মার্কিন সিনেটের শরণার্থীবিষয়ক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সাংবাদিকদের বলেন, “পাকিস্তানের সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের সম্মুখীন হওয়াটা নিন্দনীয়। আমরা শেখ মুজিবের বিচার বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবো। আশা করি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের যথাযথ শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।” কেনেডির এই বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাংশের সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।

আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

দিল্লিতে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং এক বিবৃতিতে বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় মার্কিন সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মার্কিন সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মার্কিন সরকার কখনোই গোপন বিচারের পক্ষে নয়, এবং পাকিস্তান যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে চিরস্থায়ীভাবে মার্কিন সরকারের সমস্ত সহায়তা ও বন্ধুত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।” এই বিবৃতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রকাশ করে।

কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পাঠানো এক টেলিগ্রামে কাশ্মীরের নেতা শেখ আবদুল্লাহ বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার হলে সমঝোতা আর সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে পৌঁছে যাবে। সহিংসতা পূর্ণমাত্রায় বৃদ্ধি পাবে। পাকিস্তান সরকারের উচিত সমঝোতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পূর্ব বাংলার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসা।” এই বার্তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মহল থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “সোভিয়েত-ভারত চুক্তি অনেকাংশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র। এই চুক্তির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করছে।” এই বিবৃতি পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থান এবং ভারত-সোভিয়েত সম্পর্কের প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন সূত্র জানায়, “মার্কিন সিনেটের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আরো তিন কোটি ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র পাকিস্তানকে দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সমরাস্ত্র দেওয়া হবে পূর্বের লাইসেন্সকৃত রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে।” এই তথ্য মার্কিন সরকারের দ্বৈত নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত ছিল।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানান, “শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে তিনি এখন প্রকাশ্যে আলোচনা করবেন না।” জানা যায়, ১১ আগস্ট রাতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন উ থান্টের হাতে শেখ মুজিবের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন।

লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ব্রিটিশ মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা সেনাবাহিনীর সৃষ্ট নয়। এর জন্য দায়ী সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা।” এই বক্তব্য পাকিস্তানের প্রচারণার অংশ ছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন

দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় ১২ আগস্ট প্রকাশিত ‘পাক বাহিনীর কৌশলগত পশ্চাদপসরণ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময় সম্প্রতি বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মি সেক্টর কমান্ডাররা মনে করেন, মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো ও গেরিলারা অপারেশনে মুখোমুখি অবস্থানে বেশ কয়েকটি এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর তেমন যুক্ত হয়নি। কমান্ডাররা মনে করেন যে এটি কৌশলগত কারণ হতে পারে। এটা এখন স্পষ্ট যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, যা মূলত পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা গঠিত, পূর্ব বাংলায় কাদা এবং কাঁটার ঝোপে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন প্রবল বর্ষণ পরিস্থিতি চলছে, যা যুদ্ধের জন্য ভালো পরিবেশ নয়। সেনাবাহিনীর বর্তমান কৌশল হতে পারে বর্ষা পরবর্তী মৌসুমের জন্য তারা অস্ত্র ও শক্তি সংরক্ষণ করছে। বর্ষার পরে হয়তো তারা কঠোর আক্রমণ শুরু করবে।”

কলকাতা থেকে প্রকাশিত যুগান্তর পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জঙ্গীশাহী ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর সেনাসজ্জা তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে। পাক জঙ্গিবাহিনী সীমান্তের ষাটটি চৌকিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিন্তু সেনাকমান্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও নদী, জলপথ, পাহাড় দিয়ে বিস্তৃত ২৭০টি সীমান্ত ফাঁড়ির ওপর সফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এখনো সফল হয়নি। মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং নানা অঞ্চলে আরও বেশি অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়েছে।”

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

১২ আগস্ট টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মর্টারের গোলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মটরা সেতু দখল করে করটিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। এসময় করটিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৩০০ হানাদার সেনা ও রাজাকার মুক্তিবাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে করটিয়া থেকে বাংড়া ও পৌলির কাছাকাছি আশ্রয় নেয়।

খুলনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুন্দরবনের ভিতরে মুক্তিবাহিনীর লাওতাড়া ঘাঁটির ওপর দুদিক থেকে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে আশাসুনি থানার বড়দল ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর পোটখালী বিওপির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে হানাদার সৈন্যরা পোটখালী বিওপি অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিবাহিনী পোটখালী বিওপি দখল করে সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে।

১২ আগস্ট ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়। মুজিবনগর থেকে জনযুদ্ধের ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান, ভারত ও বিশ্ব মহলের সমর্থন এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের সাফল্য এই দিনের তাৎপর্যকে আরও গভীর করে। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম কেবল একটি স্থানীয় যুদ্ধ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার জন্য একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল।

সূত্র

- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড।

- দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ আগস্ট ১৯৭১

- দৈনিক যুগান্তর, ১২ আগস্ট ১৯৭১

- দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ১৩ আগস্ট ১৯৭১

- দ্য স্টেটসম্যান, ১২ আগস্ট ১৯৭১

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৫ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

২৪ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৩ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানি বাহিনীর জগন্নাথদিঘি ঘাঁটিতে আক্রমণ মুক্তিবাহিনীর

২১ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ ইরাকে নিযুক্ত বাঙালি রাষ্ট্রদূতের

ইউনুসের বাধায় নতুন রূপে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু

একজন অমর মুক্তিযোদ্ধার জীবনী / বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান

২০ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকা হানাদারমুক্ত করেন

১৯ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী অপারেশন মুক্তিবাহিনীর

১৮ আগস্ট ১৯৭১: কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ

১৭ আগস্ট ১৯৭১: মাকালকান্দি গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ

১০

একজন স্কুলছাত্রের গ্রেপ্তার: শিশু অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন

১১

১৪ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

১২

১৩ আগস্ট ১৯৭১: বঙ্গবন্ধুর বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশে প্রতিরোধের তীব্রতা

১৩

১২ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে

১৪

১১ আগস্ট ১৯৭১: লন্ডনের হাইড পার্কে প্রবাসী বাঙালিদের প্রতিবাদ

১৫

রুহিয়ার রামনাথ হাটের গণহত্যা ও গণকবর | ঠাকুরগাঁও

১৬

বাড়িবাঁকা গণহত্যা | মেহেরপুর

১৭

গণ্ডগ্রাম ও ভারইল গণহত্যা | গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

১৮

১০ আগস্ট ১৯৭১: রাজাকারদের চতুলবাজার ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনীর অভিযান

১৯

৯ আগস্ট ১৯৭১: শাহবাজপুরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত

২০