ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

১৮ আগস্ট ১৯৭১: কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১১ পিএম
১৮ আগস্ট ১৯৭১: কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ

১৮ আগস্ট ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের গতিপথকে প্রভাবিত করে। এই প্রতিবেদনে ১৮ আগস্টের ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা কূটনৈতিক বিদ্রোহ, মানবিক প্রচেষ্টা, সামরিক অভিযান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত করে। নিম্নে সকল ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।

কূটনৈতিক বিদ্রোহ এবং সংহতি ১৮ আগস্ট হংকংয়ে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ট্রেড কমিশনার মহিউদ্দিন আহমেদ এক সাহসী পদক্ষেপে তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যে সরকার গণহত্যা ও নৃশংসতায় লিপ্ত, তাদের প্রতিনিধিত্ব করা আর কোনো ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারি না, যখন দেশের হাজার হাজার মানুষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখনই সময় আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর।” তাঁর এই পদত্যাগ পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি শক্তিশালী সমর্থনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিফলন ঘটায়।

মানবিক প্রচেষ্টা এবং অপারেশন ওমেগা এই দিনে লন্ডনের পিস নিউজ পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজসেবক রজার মুডির নেতৃত্বে অপারেশন ওমেগার সদস্যরা বাংলাদেশে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার মিশনে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এই দলের আটজন ব্রিটিশ নাগরিককে যশোরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আটক করে। ২৪ ঘণ্টা কঠোর পরিস্থিতিতে আটক থাকার পর—যেখানে তাঁদের খাবার দেওয়া হয়নি এবং চার মাইল হাঁটিয়ে সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল—১৮ আগস্ট তাঁদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁদের সঙ্গে আনা ত্রাণসামগ্রীও ফেরত দেওয়া হয়। এই ঘটনা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকে দমন করার প্রচেষ্টাকে উন্মোচিত করে এবং বাংলাদেশের দুর্গত মানুষের প্রতি তাদের নিষ্ঠুর মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে।

প্রতিরোধ এবং গেরিলা অভিযান মুক্তিবাহিনী এই দিনে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অবিরাম প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গেরিলা অভিযান পরিচালিত হয়:

মুরাদনগর, কুমিল্লা: মুক্তিবাহিনীর একটি দল মুরাদনগর থেকে হোমনার দিকে নদীপথে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ করে। মুরাদনগর থেকে প্রায় আট মাইল দূরে এই আক্রমণে দুটি নৌকা পানিতে ডুবে যায় এবং একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী এই অভিযানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের দখলে নেয়।

কদমতলী, সিলেট: সিলেট শহরের ঝালোপাড়ার কাছে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি জিপে অ্যামবুশ করে, যাতে একজন অফিসারসহ তিনজন সৈন্য নিহত হয়। অভিযান শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসেন।

কুলফতেপুর, নওগাঁ: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুলফতেপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ১২ জন আহত হন।

কাংখালি থানা: মুক্তিবাহিনীর একটি দল কাংখালি থানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজন পাকিস্তানি সৈন্য এবং বেশ কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে। এই অভিযানে তারা ৪৫টি রাইফেল জব্দ করে।

কোটালীপাড়া থানা, গোপালগঞ্জ: মুক্তিবাহিনী কোটালীপাড়া থানায় হামলা চালিয়ে তিনজন হানাদার সৈন্য এবং ১০ জন রাজাকারকে হত্যা করে। তারা একটি লঞ্চ, তিনটি বার্জ এবং ১২টি রাইফেল নিজেদের দখলে নেয়।

শ্যালা নদী, সুন্দরবন: মেজর জিয়াউদ্দিনের পরিকল্পনায় মুক্তিবাহিনী শ্যালা নদীতে খুলনাগামী পাকিস্তানি হানাদারদের একটি গানবোটে রকেট হামলা চালায়। এই আক্রমণে গানবোটের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং বেশ কয়েকজন হানাদার নিহত হয়।

পটিয়া, চট্টগ্রাম: রাত ২টার দিকে পটিয়া বিমানবন্দর থেকে পিআইএর গাড়িতে ফেরার পথে নৌবাহিনীর অফিসারদের একটি দলকে পাহারারত পদাতিক বাহিনীর সৈন্যরা গেরিলা সন্দেহে গুলি করে। এতে গাড়ির চালকসহ তিন থেকে চারজন নৌবাহিনীর অফিসার নিহত হয়। পাল্টা গুলিতে নৌবাহিনীর সৈন্যরা পদাতিক বাহিনীকে গেরিলা সন্দেহে আক্রমণ করলে একজন অফিসারসহ সাতজন পদাতিক সৈন্য নিহত হয়। অপারেশন জ্যাকপটের পর বিমানবন্দর ও বন্দর এলাকায় গেরিলা আতঙ্কে ভুগতে থাকা হানাদার সৈন্যদের মধ্যে এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝির ঘটনায় সেদিন রাতে বিভিন্ন স্থানে ১৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।

পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা এই দিনেও অব্যাহত থাকে। হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা মনসা ও চণ্ডীপূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় বানিয়াচং থানা সদর থেকে নৌকায় করে আসা পাকিস্তানি সেনারা এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীরা গ্রামটিতে হামলা চালায়। এই হামলায় ৮৮ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারান, যার মধ্যে ৪৪ জন ছিলেন নারী। হামলাকারীরা ব্যাপক লুটপাট করে গ্রামটি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এই গণহত্যা বাঙালি জনগণ ও তাদের সাংস্কৃতিক প্রথা দমনের জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পিত প্রচেষ্টার অংশ ছিল।

আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সংহতি ভারত ভারতে এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আরও জোরালো হয়:

কলকাতা: জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত এক সম্মেলনে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও লোকসভার সদস্য সৈয়দ আসআদ মাদানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “পূর্ব বাংলার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভারত সরকার পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষদের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা পুরো ভারতবাসীর জন্য গর্বের। আমরা পূর্ব বাংলার মানুষের সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি ব্লিডিং বাংলাদেশ শিরোনামে একটি চিত্র ও ভিডিওচিত্র সংকলন প্রকাশ করে। এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ছিল নিপীড়িত বাংলাদেশের গল্প তুলে ধরা। প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রতিটি ছবি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের দুঃখী, নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার চিহ্ন বহন করে। এরা সাধারণ মানুষ, যাদের একমাত্র দোষ ছিল তারা তাদের দেশকে ভালোবাসত। শিশু, নারী, বৃদ্ধ—কেউই এই ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ লুণ্ঠিত বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ছবিগুলো সেই নৃশংসতার একটি ক্ষুদ্র অংশই প্রকাশ করে, এবং সব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণ করা সম্ভব হয়নি।”

নয়াদিল্লি: ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ডি.পি. ধরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তিনি বাংলাদেশ বিষয়ক সমস্ত কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব পান, যা ভারতের সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।

পাকিস্তান পাকিস্তানে এই দিনে বিভেদ এবং সংকটের স্বীকৃতি প্রকাশ পায়:

করাচি: নিউ ওয়েভ সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাবুলে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি খান আবদুল ওয়ালি খানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, “পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এতটাই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে যে পাকিস্তানের ভাঙন আর আটকানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রধানত পাকিস্তান সরকার দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তারা জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কী চায়, তা বোঝার চেষ্টা না করে তারা তাদের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দিয়েছে। শেখ মুজিব ছাড়া কেউই পাকিস্তানের বিচ্ছেদ আটকাতে পারে না, অথচ তাঁকেই অবৈধ বিচারের নামে বন্দী করে রাখা হয়েছে। জনগণের রায় প্রমাণ করে তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উপযুক্ত।”

ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্টের শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার সংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা এটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করে এবং উ থান্টকে তাঁর ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী এই প্রতিবাদপত্র মহাসচিবের দপ্তরে জমা দেন।

আন্তর্জাতিক মঞ্চ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্দশা উল্লেখযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করে:

যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন সিনেটের শরণার্থীবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের নিন্দা করে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র অপরাধ তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। তাঁর বিচার আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রহসন মাত্র।”

নরওয়ে: অসলোয় প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে নরওয়ের পররাষ্ট্র দপ্তরে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ট্রিগভে ব্রাত্তেলি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে একটি চিঠিতে বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক আচরণ করার জন্য নরওয়ের জনগণ আপনাকে অনুরোধ করছে। আমরা আশা করি পাকিস্তান সরকার তাঁর প্রতি মানবিক আচরণ করবে।”

সোভিয়েত ইউনিয়ন: ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি এই দিনে মস্কোতে অনুমোদনের পর কার্যকর হয়। ভারতের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কে.এস. শেলভাঙ্কর এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে প্রথম সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুজনেতসেভ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ইথিওপিয়া: আদ্দিস আবাবায় রেডিও আদ্দিস আবাবা থেকে প্রচারিত একটি খবরে বলা হয়, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচার অভিযান শুরু করবে।

সুইজারল্যান্ড: জেনেভায় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত আবু সাঈদ চৌধুরী লিগ অব রেডক্রস এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রেডক্রসকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট: এই দিনে ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত একটি উপ-সম্পাদকীয়তে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত চেস্টার বোলস শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের যে গোপন বিচার চলছে, তা সম্পূর্ণ প্রহসন। এটি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার চরম ধৃষ্টতা। এই বিচার সকল রীতিনীতি ও আইন-কানুনের পরিপন্থী। মার্কিন সরকারকে অতীতের সব ভুল সংশোধন করে পাকিস্তানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সমরসামগ্রী বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে এবং সব ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য চিরতরে বন্ধ করতে হবে।”

মর্নিং স্টার: যুক্তরাজ্যের মর্নিং স্টার পত্রিকায় দিল্লি থেকে রয়টার্সের খবর উদ্ধৃত করে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে বলেছেন, ভারত পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ করেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মধ্যবর্তী স্থল-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভারতের পূর্বাঞ্চল দখল করা উচিত।

১৮ আগস্ট ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে মুক্তিবাহিনীর সাহসী গেরিলা অভিযান, পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা, কূটনৈতিক বিদ্রোহ, মানবিক প্রচেষ্টার বাধা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিভিন্ন দিক প্রকাশ পায়। মহিউদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নৈতিক শক্তিকে আরও উজ্জ্বল করে। অপারেশন ওমেগার ত্রাণ প্রচেষ্টার ব্যর্থতা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

সূত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (সপ্তম, দশম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ খণ্ড)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর দুই, চার, আট ও নয়)

ওয়াশিংটন পোস্ট, ১৮ আগস্ট ১৯৭১

দৈনিক পাকিস্তান, ১৯ আগস্ট ১৯৭১

মর্নিং স্টার, ১৮ আগস্ট ১৯৭১

আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, ভারত, ১৯ ও ২০ আগস্ট ১৯৭১

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৫ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

২৪ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৩ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানি বাহিনীর জগন্নাথদিঘি ঘাঁটিতে আক্রমণ মুক্তিবাহিনীর

২১ আগস্ট ১৯৭১: পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ ইরাকে নিযুক্ত বাঙালি রাষ্ট্রদূতের

ইউনুসের বাধায় নতুন রূপে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু

একজন অমর মুক্তিযোদ্ধার জীবনী / বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান

২০ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকা হানাদারমুক্ত করেন

১৯ আগস্ট ১৯৭১: দেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী অপারেশন মুক্তিবাহিনীর

১৮ আগস্ট ১৯৭১: কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি নৌকায় অ্যামবুশ

১৭ আগস্ট ১৯৭১: মাকালকান্দি গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ

১০

একজন স্কুলছাত্রের গ্রেপ্তার: শিশু অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন

১১

১৪ আগস্ট ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

১২

১৩ আগস্ট ১৯৭১: বঙ্গবন্ধুর বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশে প্রতিরোধের তীব্রতা

১৩

১২ আগস্ট ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে

১৪

১১ আগস্ট ১৯৭১: লন্ডনের হাইড পার্কে প্রবাসী বাঙালিদের প্রতিবাদ

১৫

রুহিয়ার রামনাথ হাটের গণহত্যা ও গণকবর | ঠাকুরগাঁও

১৬

বাড়িবাঁকা গণহত্যা | মেহেরপুর

১৭

গণ্ডগ্রাম ও ভারইল গণহত্যা | গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

১৮

১০ আগস্ট ১৯৭১: রাজাকারদের চতুলবাজার ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনীর অভিযান

১৯

৯ আগস্ট ১৯৭১: শাহবাজপুরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত

২০