১৯৭১ সালের ২৬শে আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার পশ্চিমগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী এক নির্মম গণহত্যা সংঘটিত করে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ শহীদ হন, যার মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও ছিলেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বর্বরতার একটি বীভৎস দৃষ্টান্ত।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনার দিন সকালে ৬-৭টি নৌকায় করে পাকিস্তানি হানাদাররা পশ্চিমগ্রামে প্রবেশ করে। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে রায়টুটী গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার মানিক মিল্কী। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি নলিনী রঞ্জন রায়ের বাড়ি। নলিনী রঞ্জন পালিয়ে জীবন রক্ষা করলেও পাকিস্তানি সৈন্যরা তার বাড়িতে তল্লাশি ও লুটপাট চালায়। এরপর তারা বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ব্রজেন্দ্র লাল সাহাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
পাকিস্তানি সেনারা এরপর পাশের বাড়িতে হামলা চালায় এবং সেখানে দুজন নারীকে বেয়নেটের আঘাতে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা রমেন্দ্র রায়ের বাড়ি ঘেরাও করে। এই বাড়ির নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলকে উঠানে জড়ো করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ছিলেন রমেন্দ্র রায়ের বৃদ্ধ মা, তার ভাই, ভ্রাতৃবধূ, স্ত্রী এবং দুটি বালক-বালিকা। পাকিস্তানি বর্বররা তাদের সবাইকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে এবং মৃতদেহগুলো নৌকায় তুলে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
শহীদদের পরিচয়
পশ্চিমগ্রামে পাকবাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার কয়েকজনের পরিচয় নিম্নরূপ:
ব্রজেন্দ্র লাল সাহা
অমূল্যের মা (স্বামী: গগন চন্দ্র বণিক)
প্রতাপের মা (স্বামী: রমেন্দ্র বর্মণ)
মাতঙ্গ রানী রায় (স্বামী: সুরেন্দ্র চন্দ্র রায়)
সুষমা রানী রায় (স্বামী: রমেন্দ্র চন্দ্র রায়)
রমেশ চন্দ্র রায় (পিতা: সুরেন্দ্র চন্দ্র রায়)
বিভা রানী রায় (স্বামী: রমেশ চন্দ্র রায়)
প্রাণেশ চন্দ্র রায় (পিতা: রমেশ চন্দ্র রায়)
অরবিন্দ রায় (পিতা: রমেশ চন্দ্র রায়)
অমর চান সাহা
প্রেমলতা সাহা (স্বামী: বল্লভ চন্দ্র সাহা)
এই গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার একটি চিত্র তুলে ধরে, যা গ্রামের নিরীহ মানুষের উপর নির্বিচারে হামলার প্রমাণ বহন করে।
সূত্র:
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (৫ম খণ্ড), লেখক: মো. রওশন আলী রুশো
অতিরিক্ত তথ্য যাচাই: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক নথি এবং স্থানীয় সাক্ষ্য
মন্তব্য করুন